নিজস্ব প্রতিবেদক: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার, শিক্ষক হয়রানিসহ বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
এতে উপজেলা শিক্ষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ শিক্ষা কর্মকর্তার লাগামহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ভেঙে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এ সুযোগে অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন কতিপয় দুর্নীতিবাজ শিক্ষকেরা। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী শিক্ষকেরা।
অভিযোগে প্রকাশ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান মোটা অংকের অর্থ ছাড়া শিক্ষক বদলি ও ডেপুটেশনের সুপারিশ প্রস্তাব করেন না। তিনি উপজেলার ৮২ নং নিজামকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামিমা খাতুন, সুষেন বিশ্বাস ও অজিত বিশ্বাসের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে মোট দেড় লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। ২০১৮ সালে একই স্কুলে ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। ওয়াহিদুর রহমান সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিল-ভাউচারের কথা বলে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন।
১০৯ নং নিজামকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০১৮ সালের বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ) ফান্ডের ৪০ হাজার টাকার কাজ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেন। যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট আন্তঃক্রীড়া, শিক্ষা সপ্তাহ পালন, র্যালি, উন্নয়ন ও মিনা মেলা, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াহিদুর রহমান। তিনি প্রতিটি বিদ্যালয়ে থেকে আইটেম প্রতি ১শ’ টাকা আদায় করে থাকেন। এভাবে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াহিদুর রহমান মোটা অংকের ঘুষ ছাড়া বিনোদন বিলে সই করেন না। তিনি শিক্ষক প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন। তার এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তাকে বদলিসহ নানা হয়রানি করেন ওই প্রভাবশালী সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এরআগে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ একাধিক উঠেছিল। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তিমূলকভাবে তাকে বোয়ালমারী উপজেলা থেকে বরিশালের মুলাদী উপজেলায় বদলি করা হয়।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগকারী অধিকাংশ শিক্ষক অনিয়মের সাথে জড়িত। আমি তাদের এ অনিয়মকে প্রশ্রয় দেই না বলে তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
কাশিয়ানী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র বালা অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। সত্যতা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।